এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফার কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়েছে। আজ রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল ৫টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় ৪১জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরমধ্যে ফেনীতে নিহত হয়েছেন পাঁচ জন। একই সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে নরসিংদীতে। ৪ জন করে ৮ জন নিহত হয়েছেন কিশোরগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে। মাগুরায় ও রংপুরে নিহত হয়েছেন ৬ জন। সংঘর্ষে দুই জন করে প্রাণ হারিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ, পাবনা ও বগুড়ায়। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় নিহত হয়েছেন একজন। এছাড়া সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লার দেবিদ্বার, জয়পুরহাট ও বরিশালে নিহত হয়েছেন একজন করে। কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে এক পুলিশ সদস্য নিহতের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালের দায়িত্বরতদের সূত্রে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মাগুরায় ছাত্রদল নেতাসহ নিহত তিন: সকাল থেকেই উত্তপ্ত মাগুরা। দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিতে মেহেদী হাসান রাব্বি নামে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। নিহত রাব্বি মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আন্দোলনকারীরা রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় পারনান্দুয়ালী এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ভায়নার মোড়ে অবস্থান নেয়। অভিযোগ, এ সময় তাদের বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে গুলিতে রাব্বি নিহত হন। এছাড়াও, সংঘর্ষে সুমন শেখ, ফরহাদ নামের ২ যুবক মারা গেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা।
মুন্সিগঞ্জে যা হলো: সকালে মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময়, একইস্থানে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেখা দেয় উত্তেজনা। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে সংঘর্ষে দু’জন মারা যান। তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পাবনায় গুলিতে দু’জনের মৃত্যু: সহিংসতায় পাবনাতেও মারা গেছেন দু’জন। জেলা শহরের চাতিকমোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে। এ সময় বিরোধী পক্ষের সাথে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হয় অন্তত ৩০ জন। আর মারা যায় দু’জন। প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম রুমি।
বগুড়ায় যেভাবে নিহত হয় দু’জন: বগুড়া সদর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, পুলিশের গুলিতেই তারা নিহত হয়েছেন। দুজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবির আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। জানা যায়, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার সদরের বড়গোলা এলাকায় বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলিতে আহত হয় আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মনিরুল ইসলাম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন শফিউল আজম। এছাড়া, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ আহত হয়ে ১১ জন ভর্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে ২০ থেকে ২৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ: সিরাজগঞ্জেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। অভিযোগ, এ সময় এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার নাম আবদুল লতিফ বলে জানা গেছে। তার বাড়ি শহরের গয়লা এলাকায়।
রোববার বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জানা গেছে, দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের সময় লতিফ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে পড়ে যান। তখন ক্ষিপ্ত কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
নরসিংদীতে নিহত আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী ঃ নরসিংদীর মাধবদিতে আন্দোলনকারীদের গণপিটুনিতে আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার পৌরসভা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, মাধবদী থানার চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন (৩৬), সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোটভাই ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেব দেলু, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান ভুইয়া (৪৫), পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল, আওয়ামী লীগের কর্মী কামাল মিয়া (৪৫)।
জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবদি এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। পরে তারা মাধবদি সদরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পৌরসভা মোড়ে জড়ো হয়। আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে তাদের ধাওয়া ও গুলি ছোঁড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ৮-১০ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে, ক্ষিপ্ত হয়ে আন্দোলনকারীরা আবারও মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌরসভার সামনে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে । এ সময় তাদের গণপিটুনিতে মারা যায় ৫ আওয়ামী লীগ নেতা।